কেরলে কোভিড ভাইরাসের নয়া ভ্যারিয়েন্টের খোঁজ মিলেছে। কেরলের তিরুঅনন্তপুরমে ৭৯ বছরের এক মহিলার নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, তিনি জেএন.১-এ আক্রান্ত হয়েছেন। এর আগে তামিলনাড়ুর তিরুচিরাপল্লি থেকে সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন এক মহিলা। তাঁর শরীরেও ধরা পড়েছিল করোনা ভাইরাসের জেএন.১ ভ্যারিয়েন্ট। এর পরেই কেন্দ্র সতর্ক হয়েছে। রাজ্যগুলিকে নির্দেশিকা পাঠানো হয় সোমবার। ওই নির্দেশে আসন্ন উৎসবের মরসুমে মাস্ক পরা, স্যানিটাইজেশনের উপরে জোর দেওয়া হয়। পাশাপাশি, রাজ্যগুলিকেও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কর্নাটক সরকার নতুন করে সীমানা লাগোয়া জেলাগুলিতে করোনা পরীক্ষা বাড়ানো ও ফলাফল দ্রুত হাতে পাওয়ার উপরে জোর দিয়ে নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে মঙ্গলবার। কো-মর্বিডিটি থাকা নাগরিক, প্রবীণ নাগরিকদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে সেখানে।
স্বভাবতই নয়া প্রজাতির করোনা ভাইরাসের খোঁজ মেলায় নড়েচড়ে বসেছেন জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারাও। এত দিন ধরে বন্ধ থাকার পর জেলার হাসপাতালগুলি করোনার সংক্রমণের ধাক্কা মোকাবিলায় কতখানি তৈরি রয়েছে, তা নতুন করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেই সঙ্গে করোনা পরীক্ষার জন্য জেলায় কত পরিমাণ কিট আছে, তা নিয়ে খোঁজখবর শুরু হয়েছে। পাশাপাশি, উপরমহল থেকে কী ধরনের নির্দেশ আসে, তার জন্য স্বাস্থ্যভবনের দিকে তাকিয়ে আছেন জেলা স্বাস্থ্য কর্তারা। জেলার স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, এখনও পর্যন্ত রাজ্যের তরফে কোনও নির্দেশিকা না এলেও রাজ্যের কর্তাদের ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে, করোনা মোকাবিলায় আবার নতুন করে সক্রিয় হতে হবে। বিশেষ করে, মঙ্গলবার করোনা নিয়ে রাজ্যের কর্তাদের মধ্যে বৈঠকের খবর পাওয়ার পর জেলার কর্তারাও মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। করোনা পরিস্থিতি অনেক দিন আগেই স্বাভাবিক হয়েছে। শুধু তাই নয়, চলতি বছরের মার্চ মাসে করোনা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সমস্ত কাজকর্ম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বলে খবর। জেলার সকল হাসপাতালে তৈরি হওয়া কোভিড ওয়ার্ড এখন সাধারণ ওয়ার্ড় হিসাবেই ব্যবহার হচ্ছে। বিশেষ করে, ডেঙ্গি রোগীদের চিকিৎসার জন্য এই সমস্ত ওয়ার্ডকে কাজে লাগানো হচ্ছিল। এখন ওই সকল ওয়ার্ড মূলত মেডিসিন ওয়ার্ড হিসাবেই ব্যবহৃত হচ্ছে বলে জেলার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে। এমনকি, করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য কল্যাণীর এনএসএস হাসপাতালে যে তিনশো শয্যার কোভিড হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছিল, বন্ধ করে দেওয়াহয়েছে সেটিও।
তবে স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, রাজ্য থেকে নির্দেশ এলে দু-তিন দিনের মধ্যে আবার নতুন করে ওয়ার্ড প্রস্তুত কিংবা হাসপাতালে করোনা রোগীর চিকিৎসা পরিকাঠামো গড়ে ফেলা যাবে। সেই সঙ্গে কোভি়ড মোকাবিলায় জেলা হাসপাতাল, জেএনএম সহ যে সকল হাসপাতালে অক্সিজেন প্লান্ট তৈরি করা হয়েছিল, সেগুলিও চালু আছে। তা বর্তমানে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। চালু রয়েছে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর যন্ত্রগুলিও। তবে এই মুহূর্তে জেএনএম ছাড়া অন্য কোনও হাসপাতালে করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে না বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। নমুনা সংগ্রহ করে জেএনএম-এ পরীক্ষার জন্য বহন করার টাকা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যে কারণে কোনও হাসপাতালেই নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে না। কোনও রোগীর করোনা সংক্রমিত হওয়ার সন্দেহ হলে তাঁকে জেএনএম হাসপাতালে যেতে হচ্ছে পরীক্ষার জন্য। পাশাপাশি, কোনও হাসপাতালেই পরীক্ষার জন্য কিট রাখা নেই বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। যদিও স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, জেলায় কিট রাখা হয়েছে। প্রয়োজন পড়লে সঙ্গে সঙ্গে তা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, “আমরা নিজেদের মতো করে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি। যাতে নির্দেশ এলেই আমরা প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো প্রস্তুত করে ফেলতে পারি।”সোমবারই কৃষ্ণনগরের শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল ও কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতালে ‘মক টেস্ট’ অর্থাৎ সমস্ত ধরনের পরিকাঠামোর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ওষুধ কী পরিমাণে আছে, তা খতিয়ে দেখেছেন কর্তারা। জেলার উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক পরাশর পোদ্দার বলেন, “রাজ্য থেকে যেমন নির্দেশ আসবে, সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে।”
留言