top of page

ইএমআই সংস্কৃতি ভারতে: সঠিক নাকি ভুল?

ইএমআই সংস্কৃতি ভারতে: সঠিক নাকি ভুল? একটি বিশ্লেষণ


ভারতে ইএমআই (ইক্যুয়েটেড মান্থলি ইনস্টলমেন্ট) বা মাসিক কিস্তির মাধ্যমে পণ্য বা সেবা কেনার সংস্কৃতি ক্রমশই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আধুনিক সময়ে ইএমআই শুধু গাড়ি বা বাড়ি কেনার ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং মোবাইল ফোন, ইলেকট্রনিক্স, আসবাবপত্র থেকে শুরু করে দৈনন্দিন ব্যবহারের পণ্য পর্যন্ত ক্রয়ের ক্ষেত্রে ইএমআই অপশন ব্যবহৃত হচ্ছে। এই সংস্কৃতি ভারতের অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক পরিবর্তনের সূচনা করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ইএমআই সংস্কৃতি কি সঠিক নাকি ভুল? এই প্রবন্ধে আমরা ইএমআই সংস্কৃতির সুবিধা ও অসুবিধা বিশ্লেষণ করব এবং একটি বিস্তৃত মূল্যায়ন প্রদান করব।

ইএমআই সংস্কৃতির উত্থান এবং প্রভাব


১. ইএমআই সংস্কৃতির উত্থান


ভারতের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে ইএমআই সংস্কৃতি গত কয়েক দশকে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এর পিছনে মূল কারণগুলির মধ্যে অন্যতম হল:


- ঋণপ্রাপ্তির সহজলভ্যতা: ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি সহজেই ক্রেডিট কার্ড, ব্যক্তিগত ঋণ এবং অন্যান্য অর্থায়নের অপশন প্রদান করে, যা মানুষকে সহজে ইএমআই-এর মাধ্যমে পণ্য বা সেবা কিনতে উৎসাহিত করে।


- আয়ের অসমতা এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উত্থান: ভারতের বিশাল মধ্যবিত্ত শ্রেণী, যারা এককালীন বড় অঙ্কের অর্থ প্রদান করতে পারে না, ইএমআই ব্যবস্থাকে একটি সুবিধাজনক বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করেছে।


- দামি পণ্যের চাহিদা: বিশেষ করে ইলেকট্রনিক্স, গাড়ি এবং বাড়ির মতো মূল্যবান পণ্যগুলি কেনার ক্ষেত্রে ইএমআই একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এটি ক্রেতাদের প্রয়োজনীয় পণ্যগুলি কিনতে উৎসাহিত করে, যদিও তারা তাৎক্ষণিকভাবে সেই পণ্যের পুরো দাম দিতে সক্ষম নাও হতে পারেন।


- বাজারের প্রতিযোগিতা: ইএমআই সংস্কৃতি বৃদ্ধি পেয়েছে কারণ খুচরো বিক্রেতা এবং ই-কমার্স কোম্পানিগুলি তাদের পণ্যগুলি বিক্রি করতে ক্রেতাদের জন্য ইএমআই অপশন নিয়ে আসে, যা ক্রেতাদের মধ্যে সহজলভ্যতা বাড়িয়ে তুলেছে।


২. ইএমআই-এর সুবিধা


অর্থনৈতিক সচ্ছলতা: ইএমআই সংস্কৃতি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের জন্য বড় অঙ্কের পণ্য বা সেবা কেনার জন্য একটি সহজলভ্যতা তৈরি করেছে। এর ফলে একজন ক্রেতা এককালীন বড় অঙ্কের টাকা না দিয়েও মাসিক কিস্তিতে তার প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারেন। এটি বিশেষ করে গৃহঋণ, গাড়ি ঋণ বা উচ্চমূল্যের ইলেকট্রনিক পণ্যের ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর।


ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি: ইএমআই পদ্ধতি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। একজন ব্যক্তি যদি একটি মোবাইল ফোন বা গৃহস্থালি পণ্য কিনতে চান, তিনি ইএমআই পদ্ধতিতে সেই পণ্যটি সহজেই কিনতে পারেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তার মূল্য শোধ করতে পারেন।


জরুরি প্রয়োজনীয়তার জন্য সহায়ক: কিছু পণ্য এবং পরিষেবা (যেমন গৃহঋণ, চিকিৎসা খরচ) অবিলম্বে প্রয়োজন হয়। ইএমআই পদ্ধতি এই ধরনের প্রয়োজনীয়তাগুলি মেটাতে সহায়ক হতে পারে। মানুষ জরুরি অবস্থায় অর্থায়নের সুবিধা পায় এবং তৎক্ষণাৎ তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য বা পরিষেবা সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়।


ইএমআই সংস্কৃতির সমস্যা ও অসুবিধা


১. ঋণগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি


ইএমআই ব্যবস্থার মূল সমস্যা হলো ঋণগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি। অনেক মানুষ ইএমআই-এর সহজলভ্যতার কারণে অপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে আগ্রহী হয়। তারা একাধিক ইএমআই-এর মাধ্যমে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং মাসিক কিস্তি পরিশোধ করতে অসুবিধার সম্মুখীন হয়। বিশেষ করে ক্রেডিট কার্ডের ইএমআই ব্যবহারের ক্ষেত্রে উচ্চ সুদের হার পরিশোধ করতে হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক সংকট তৈরি করতে পারে।


উদাহরণ: ভারতীয়দের মধ্যে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে ইএমআই-এর মাধ্যমে পণ্য কেনার প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। তবে অনেক সময় গ্রাহকরা একাধিক ক্রেডিট কার্ডের ইএমআই নিয়ে সমস্যায় পড়েন এবং তাদের মাসিক আয়ের একটি বড় অংশ ঋণ শোধ করতে ব্যয় করতে হয়।


২. উচ্চ সুদের হার


বিভিন্ন ধরনের ইএমআই অপশন, বিশেষ করে ব্যক্তিগত ঋণ এবং ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে, উচ্চ সুদের হার ধার্য করা হয়। এই সুদের হার অনেক সময় প্রাথমিক ঋণের চেয়ে বেশ কয়েক গুণ বেশি হয়ে যায়। ফলে গ্রাহকরা দীর্ঘ সময়ের জন্য ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন এবং আর্থিকভাবে অসুবিধার সম্মুখীন হন।


৩. আর্থিক পরিকল্পনার অভাব


ইএমআই ব্যবস্থার ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেক মানুষ আর্থিক পরিকল্পনার অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারা একাধিক ইএমআই নিয়ে আর্থিক সংকটে পড়তে পারে, কারণ তারা তাদের মাসিক আয় ও ব্যয়ের সঠিক পরিকল্পনা করে না। ফলে তাদের মাসিক বাজেটে চাপ তৈরি হয় এবং জরুরি প্রয়োজনের সময় তারা অর্থের অভাবে ভোগান্তির শিকার হয়।


ইএমআই সংস্কৃতি: সঠিক নাকি ভুল?

ইএমআই সংস্কৃতি সম্পর্কে একটি সাধারণ প্রশ্ন উঠে আসে, এটি সঠিক নাকি ভুল? এই প্রশ্নের উত্তর এককভাবে দেওয়া সম্ভব নয়। এটি নির্ভর করে ব্যবহারকারীর আর্থিক জ্ঞানের উপর, এবং তিনি কীভাবে ইএমআই ব্যবস্থাকে তার জীবনে প্রয়োগ করছেন। কিছু ক্ষেত্রে ইএমআই অত্যন্ত সহায়ক হতে পারে, আবার কিছু ক্ষেত্রে এটি ঋণগ্রস্ততার কারণ হয়ে উঠতে পারে।

১. সঠিক দৃষ্টিকোণ থেকে

ইএমআই সংস্কৃতি সঠিক হতে পারে যদি এটি বুদ্ধিমত্তার সাথে ব্যবহার করা হয়। একজন ব্যক্তি যদি তার আয় এবং ব্যয়ের সঠিক পরিকল্পনা করে ইএমআই ব্যবহারের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পণ্য বা পরিষেবা কেনেন, তবে এটি তার জন্য অত্যন্ত সহায়ক হতে পারে। এটি তার আর্থিক অবস্থাকে শক্তিশালী করতে পারে এবং তাকে বড় অঙ্কের খরচের চাপ থেকে মুক্তি দিতে পারে।

২. ভুল দৃষ্টিকোণ থেকে

ইএমআই ব্যবহারের সময় যদি কেউ অতিরিক্ত খরচের দিকে ঝুঁকে যায় এবং তার মাসিক আয়ের বাইরে ব্যয় করতে শুরু করে, তবে এটি তার জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। উচ্চ সুদের হার এবং একাধিক ইএমআই-এর কারণে ঋণগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক সংকট তৈরি করতে পারে।

ভারতের ইএমআই সংস্কৃতির ভবিষ্যৎ

ভারতে ইএমআই সংস্কৃতির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল মনে হচ্ছে, কারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে সাথে ঋণ গ্রহণের সুবিধা বাড়ছে। তবে ভবিষ্যতে ইএমআই ব্যবস্থার সফল প্রয়োগের জন্য কিছু বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন:

  • আর্থিক শিক্ষা: ইএমআই ব্যবস্থার সঠিক ব্যবহারের জন্য আর্থিক শিক্ষার প্রয়োজন। মানুষকে তার আয় ও ব্যয়ের সঠিক পরিকল্পনা করতে হবে এবং ইএমআই গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।

  • নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা: ইএমআই ব্যবস্থার উপর একটি সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রয়োজন, যাতে উচ্চ সুদের হার এবং ঋণগ্রস্ততার ঝুঁকি কমানো যায়।

  • নতুন প্রযুক্তি: ইএমআই ব্যবস্থাকে আরও সহজ করতে নতুন প্রযুক্তির প্রয়োগ করা যেতে পারে, যেমন ডিজিটাল ঋণ প্রদান এবং স্বয়ংক্রিয় পেমেন্ট পদ্ধতি।

উপসংহার

ভারতে ইএমআই সংস্কৃতি সঠিক নাকি ভুল, তা নির্ভর করে এর ব্যবহারের উপর। ইএমআই-এর সুবিধা যেমন রয়েছে, তেমনি এর মাধ্যমে ঋণগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে। সঠিক পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ইএমআই সংস্কৃতি ব্যবহার করা হলে এটি আর্থিকভাবে মানুষের জন্য অত্যন্ত উপকারী হতে পারে। কিন্তু ভুল ব্যবহারের ফলে আর্থিক সংকটে পড়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

 
 

                                              ABOUT US       

                Sindhuk was established in 2007. We are one of the famous Tax Consultancy firms in West Bengal and are engaged in providing chartered accounting services, financial and consultancy services, auditing services, EPFO services, ESIC services, business process outsourcing services, income tax services, GST services, Trade Online Service, Shop Online, Food Delivery ,Coaching centre , Web design,Health Insurance, Term Insurance and along with import export consultancy services. 

                     With years of rich experience and credibility to back up, Sindhuk has always been able to meet the client's specific requirement.

QUICK LINKS

CONTACT INFO

00:00 / 04:25

Sindhuk
Reg No: UDYAM-WB-13-0023711

Address :- Beldanga Bazarpara, Near Rabindranath Statue,

Opp. Ram Sita Mandir, Murshidabad -742133,

West Bengal, India

Call Us: +91 9832773806

Email: sindhukcom@gmail.com

COMPLIANCE OFFICER

Call Us: +91 9832773806

Email: biswajitmalakar@yahoo.co.in

FOLLOW US ON 

  • Facebook
  • Twitter
  • YouTube
  • Pinterest
  • Tumblr Social Icon
  • Instagram

Copyright © 2025 Sindhuk. All rights reserved.

Rate UsDon’t love itNot greatGoodGreatLove itRate Us
WhatsApp Image 2023-06-25 at 1.31_edited
bottom of page