বহু ভারতীয়ই এখন মালদ্বীপ যাত্রা বাতিল করে, লাক্ষাদ্বীপ যাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই অবস্থায় আসুন জেনে নেওয়া যাক, মালদ্বীপ এবং লাক্ষাদ্বীপ - এই দুই জায়গায় দর্শনীয় স্থান কী কী? কোন দ্বীপে ভ্রমণে কত খরচ পড়ে?
কলকাতা: লাক্ষাদ্বীপ না মালদ্বীপ – সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে চাইলে কোনটা হবে ভারতীয়দের গন্তব্য? এই নিয়ে শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক। গত সপ্তাহে লাক্ষাদ্বীপ সফরে গিয়ে, সেখানকার পর্যটনকে উৎসাহ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এরপর, মালদ্বীপের দিক থেকে এসেছে এক আশ্চর্যজনক প্রতিক্রিয়া। ভারত ও প্রধানমন্ত্রী মোদীকে আক্রমণ করে, মালদ্বীপের বেশ কয়েকজন সরকারি কর্তা বলেছেন, মালদ্বীপের থেকে পর্যটকদের নজর ঘোরাতেই নাকি লাক্ষাদ্বীপকে তুলে ধরছেন প্রধানমন্ত্রী। এর ফল হয়েছে ঠিক উল্টো। বহু ভারতীয়ই এখন মালদ্বীপ যাত্রা বাতিল করে, লাক্ষাদ্বীপ যাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই অবস্থায় আসুন জেনে নেওয়া যাক, মলদ্বীপ এবং লাক্ষাদ্বীপ – এই দুই জায়গায় দর্শনীয় স্থান কী কী? কোন দ্বীপে ভ্রমণে কত খরচ পড়ে?
দেখার জায়গা
লাক্ষাদ্বীপে মোট ৩৬টি দ্বীপ রয়েছে। আর মালদ্বীপে, ব্যক্তিগত সৈকত এবং রিসর্ট-সহ মোট ৩০০টি দ্বীপ রয়েছে।
মালদ্বীপ হল বিশ্বের কয়েকটি স্থানের মধ্যে একটি যেখানে প্রাকৃতিকভাবে গঠিত প্রবালপ্রাচীর বা দ্বীপগুলি জলজ জীবন এবং মানুষ উভয়েই পরিপূর্ণ দেখতে পাওয়া যায়। কভার করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য হল:
মালদ্বীপে দেখার জায়গা
মাহে: দেশের রাজধানী শহর। অসংখ্য রঙিন ভবন এবং মসজিদ রয়েছে এই শহরে। আর শহরের সমুদ্র সৈকতগুলি জুড়ে রয়েছে অসংখ্য ওয়াটার স্পোর্চের জায়গা।
মাফুশি: এটি একটি আকর্ষণীয় সমুদ্র সৈকত এবং মাফুশি কারাগারের জন্য বিখ্যাত। পর্যটকরা এখানে স্নরকেলিং, সমুদ্র সৈকত ধরে হাঁটা বা সূর্যস্নানের সুযোগ পান।
হিথাধু: আদ্দু শহরে অবস্থিত এই জায়গাটি ৫.৩ বর্গ মাইল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। আদ্দু প্রাকৃতিক উদ্যান এবং প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য, সারা বিশ্বে বিখ্যাত।
লাক্ষাদ্বীপে দেখার জায়গা
মিনিকয় দ্বীপ: লাক্ষাদ্বীপের মিনিকয় দ্বীপটি তার অপূর্ব সৈকতের জন্য বিখ্যাত। এছাড়া এই দ্বীপে প্রচুর উপহ্রদ রয়েছে।
কাভারত্তি: দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী শহরটি সমস্ত দিক থেকেই প্রাকৃতিক বিস্ময়ে পরিপূর্ণ। শহরটি গিরে রয়েছে প্রচুর লেগুন। এখানে স্কুবা ডাইভিং এবং অ্যাকোয়ারিয়াম ট্যুরের মতো সুবিধা রয়েছে।
কদমত দ্বীপ: এই জায়গাটি প্রবাল প্রাচীরে ঘেরা। দ্বীপের চারপাশে স্নরকেলিং এবং সামুদ্রিক জীবন দেখার ট্যুরের জন্য উপযুক্ত।
ভ্রমণের সেরা সময়
নিরক্ষরেখার কাছাকাছি হওয়ায় দুই জায়গাতেই গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ু রয়েছে। মলদ্বীপের গড় তাপমাত্রা ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর লাক্ষাদ্বীপের গড় তাপমাত্রা ২০ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মলদ্বীপে ভ্রমণের সেরা সময় নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাস। সবথেকে বেশি পর্যটকের ভিড় থাকে ডিসেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে। আর লাক্ষাদ্বীপে যাওয়ার আদর্শ সময় অক্টোবর থেকে মে মাস। মলদ্বীপ পুরোটা গুরতে গেলে ন্যূনতম ৭ থেকে ১০ দিন লাগবে। লাক্ষাদ্বীপ কিন্তু ৫-৬ দিনেই ঘুরে আস সম্ভব।
মুদ্রা এবং বাজেট
মলদ্বীপের মুদ্রা, মালদ্বীপ রুফিয়া নামে পরিচিত। ১ মালদ্বীপ রুফিয়া মানে ভারতীয় মুদ্রায় ৪.৬৩ টাকা। আর লাক্ষাদ্বীপ ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হওয়ায়, এখানে ভারতীয় মুদ্রাই চলে। এবার দেখে নেওয়া যাক ভ্রমণের খরচ –
মালদ্বীপ ভ্রমণের গড় বাজেট
বিমানের খরচ: দুজনের জন্য রাউন্ড ট্রিপের টিকিটের খরচ গড়ে ৩০,০০০ টাকা।
থাকার খরচ: বিলাসবহুল হোটেলে ডাবল বেড রুমের ভাড়া মোটামুটি ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা।
দিন প্রতি খাবার খরচ: ন্যুনতম ১০০০ টাকা
দিন প্রতি দর্শনীয় স্থানগুলি দেখার খরচ: ৪৫০০ টাকা
অন্যান্য খরচ: ৫০০০ টাকা
অর্থাৎ, মালদ্বীপ ভ্রমণের জন্য কোনও দম্পতির প্রতি দিনের গড় খরচ হল ১৭,৫০০ টাকা।
লাক্ষাদ্বীপ ভ্রমণের গড় বাজেট
বিমানের খরচ: কেরলের কোচি থেকে লাক্ষাদ্বীপে দুজনের জন্য রাউন্ড ট্রিপের জন্য আনুমানিক ২০,০০০ টাকা
থাকার খরচ: বিলাসবহুল হোটেলের ডাবল বেড রুমের ভাড়া ২০০০ থেকে ৭০০০ টাকার মধ্যে পড়বে।
দিন প্রতি খাবার খরচ: ৩০০ টাকা।
দিন প্রতি দর্শনীয় স্থান দেখার খরচ: ২০০০ টাকা
অন্যান্য খরচ: ৩০০০ টাকা
অর্থাৎ, ভ্রমণের জন্য কোনও দম্পতির প্রতি দিনের গড় খরচ হল ৭,৩০০ টাকা
ভিসা
মলদ্বীপে ভারতীয়দের ভিসা অন অ্যারাইভাল দেওয়া হয়। অর্থাৎ, আপনাকে আগে থেকে ভিসা করতে হবে না, সেই দেশে পা রাখার পর ৩০ দিনের জন্য ভিসা দেওয়া হয়। এরজন্য ৬ মাসের বৈধতা-সহ পাসপোর্ট লাগে। লাক্ষাদ্বীপ দ্বীপে যাওয়ার জন্য ভারতীয়দের ভিসার প্রশ্নই নেই।
কেনাকাটা
কেনাকাটার স্বর্গরাজ্য হল মালদ্বীপ। জামা-কাপড় থেকে শুরু করে স্থানীয় আচার, ঘর সাজানোর জিনিস, প্রসাধনী কী নেই। কেনাকাটার জন্য মালের স্থানীয় বাজার এবং মাজেদি মাগু দুটি প্রধান গন্তব্যস্থল।
যদিও লাক্ষাদ্বীপে কেনাকাটার সুযোগ কম। তবে আগত্তি দ্বীপ, কাভারত্তি এবং মিনিকয় দ্বীপগুলি থেকে নারকেল গুঁড়ো, নারকেল তেল, মাছের বিস্কুট, এবং হিমায়িত মাছ কিনতে পারেন।
পরিবহন
মালদ্বীপে পরিবহনের প্রধান উপায় হল বাইক এবং সাইকেল। প্রায় সব গেস্টহাউস এবং রিসর্টেই বিনামূল্যে বাইক বা সাইকেল পাওয়া যায়। সেগুলি নিয়েই পর্যটকরা দ্বীপে ঘোরাঘুরি করতে পারেন। অন্যান্য দ্বীপে যাওয়ার জন্য নিতে হবে ফেরি এবং স্পিডবোট।
লাক্ষাদ্বীপে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হল জাহাজ। দ্বীপগুলোর মধ্যে কোনও সড়ক যোগাযোগ নেই। তাই জাহাজ, নৌকো ও ফেরিই পরিবহনের প্রধান মাধ্যম।
তাহলে, কী ঠিক করলেন? কোথায় যাবেন, মালদ্বীপ না লাক্ষাদ্বীপ?